প্রিয় সন্তানকে ফিরে পেয়ে মা আমিনাহ সিদ্ধান্ত নেন- তিনি ইয়াসরিব (বর্তমান মদিনা) গিয়ে স্বামী আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করবেন। শ্বশুর আব্দুল মুত্তালিবের ব্যবস্থাপনায় ছোট্ট মুহাম্মদ (সা.) ও পরিচারিকা উম্মে আয়মানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মক্কা থেকে প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌঁছান। সেখানে এক মাস অবস্থানের পর মক্কায় ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতা ক্রমে বাড়তে থাকে, এবং অবশেষে মক্কা–মদিনার মাঝামাঝি আবওয়া নামক স্থানে তিনি ইন্তেকাল করেন। অল্প বয়সেই নবী (সা.) হয়ে পড়েন সম্পূর্ণ ইয়াতিম।
দাদার স্নেহের ছায়ায়:
পিতার মৃত্যুর পর আশ্রয় ছিল মায়ের বুকে, আর মাতার মৃত্যুর পর ভরসা হয়ে দাঁড়ালেন স্নেহময় দাদা আব্দুল মুত্তালিব। পুত্র আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সময় তিনি যেমন কষ্ট পেয়েছিলেন, পুত্রবধূ আমিনার মৃত্যুতেও তাঁর হৃদয় আরো গভীরভাবে ভেঙে পড়ে। কারণ তিনি জানতেন—এখন ছোট্ট মুহাম্মাদ সাঃ এর আর কোনো অবলম্বন রইল না। সেই শোকে তাঁর হৃদয় বিদীর্ণ হলেও নাতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা যেন শতগুণে বেড়ে যায়। তিনি নাতিকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি স্নেহে আগলে রাখতেন।
ইবনে হিশামের বর্ণনা অনুযায়ী- কা‘বাহ শরিফের পাশে আব্দুল মুত্তালিবের জন্য একটি বিশেষ আসন নির্ধারিত ছিল। তাঁর সন্তানেরা সেই আসনের পাশে বসতেন, কিন্তু কেউ সেখানে বসার সাহস করতেন না। অথচ ছোট্ট মুহাম্মদ সাঃ এসে নির্ভয়ে সেই আসনে বসে পড়তেন। চাচারা তাঁকে নামাতে চাইলে দাদা বলতেন, “ওকে কিছু বলো না, ওকে বসতে দাও। আল্লাহর কসম, এই শিশু সাধারণ নয়—অন্য রকমের এক মহান সত্তা।” তিনি নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করতেন, স্নেহে ভরিয়ে দিতেন এবং তাঁর প্রতিটি আচরণে আনন্দ খুঁজে পেতেন।
অবশেষে, যখন নবী (সা.)-এর বয়স আট বছর দুই মাস দশ দিন, তখন প্রিয় দাদা আব্দুল মুত্তালিবও মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি পুত্র আবু তালিবের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করেন যেন তিনি মুহাম্মদ সাঃ-এর যত্ন নেন। এরপর থেকেই আবু তালিব তাঁর ভাতিজাকে নিজের সন্তানের মতো করে লালন-পালন করতে থাকেন।
পড়ুন আগের পর্ব-২






