ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুখপাত্র মাওলানা জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে একমত নয়। তার দাবি, বেসামরিক সরকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী হলেও সেনাবাহিনী সেই অবস্থানে নেই।
খাইবার নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের ভেতরে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হামলা হচ্ছে, তার জন্য আফগানিস্তানকে দায়ী করা অন্যায় ও দুঃখজনক। এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এমন কিছু গোষ্ঠী সক্রিয় আছে, যারা দেশটিকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তবে এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা আফগানিস্তানের দায়িত্ব নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের ওপর হামলা, সামরিক ঘাঁটি ও বিমানবন্দরে হামলার ঘটনা তুলে ধরেন, যার পর পাকিস্তান ‘যরবে গজব’ নামে অভিযান শুরু করেছিল।
মুজাহিদ সাহেব বলেন- “বিশ্বাস ও আন্তরিকতা থাকলে তবেই আলোচনায় ফল আসে। কিন্তু হুমকি-ধমকি দিলে সংলাপের পরিবেশ নষ্ট হয়।”
তার ভাষায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে এমন ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা অন্য কোনো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান চায় আফগানিস্তান তাদের অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখুক, কিন্তু সেটি তাদের ক্ষমতার মধ্যে নয়।
তিনি আরও জানান, আফগানিস্তান কেবল সেই সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে পারে, যা তাদের ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থানে অটল—আফগান মাটি কখনোই কোনো প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।”
ধারণকৃত সীমান্তরেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই অঞ্চলের বহু এলাকা এখনো পাকিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্দেশ্যে পাকিস্তানকে অর্থ সহায়তা দিলেও তারা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হয়। মুজাহিদ বলেন- “আফগানিস্তান ও পাকিস্তান দুই ভাই দেশ। একে অপরের বিরুদ্ধে সমস্যা সৃষ্টি না করে বরং সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, অবিশ্বাস, প্রোপাগান্ডা, অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা বা অভিযোগের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না; বরং পারস্পরিক বিশ্বাসই স্থায়ী সমাধানের পথ তৈরি করে।
স্পিন বোলদাকের সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে মুজাহিদ জানান, যুদ্ধের সময় কিছু রকেট ভুলবশত স্থানীয় বাসাবাড়িতে পড়েছিল। পরে ইমারাতে ইসলামিয়ার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ব্যয় এবং শহীদদের পরিবারকে রক্তমূল (দিয়াত) প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, “ইমারাতে ইসলামিয়া যুদ্ধ সমর্থন করে না। যুদ্ধ কেবল ধ্বংস, ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।”
পাকিস্তানি শরণার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আফগানিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তানি শরণার্থীরা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির আওতায় রয়েছেন এবং তাদের কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড বা অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তান সরকার ও তাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না, যা দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।আফগান শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “যদি পাকিস্তান তাদের ফেরত পাঠাতে চায়, তবে নিরাপদ ও মানবিক পথ নিশ্চিত করতে হবে।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ভারসাম্যপূর্ণ এবং ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেবল বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক। আফগান সরকার কখনোই চায় না তার ভূমি অন্য কোনো দেশের বিরোধের ক্ষেত্র হয়ে উঠুক।
শেষে তিনি বলেন, আফগানিস্তান বহুবার পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তপথ ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ খোলার বিষয়ে আলোচনা করেছে, কিন্তু পাকিস্তান বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। “আমরা রাজনীতি নয়, সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চেয়েছি; কিন্তু তারা ছোটখাটো ঘটনার অজুহাতে সীমান্ত বন্ধ করে সমস্যা তৈরি করেছে,” যোগ করেন তিনি।
সূত্র: আরটিএ








