সর্বশেষ
মহানবী (সা.) অবমাননা করে রাজীব সাহা এখনো অধরা
জুলাই সনদকে ইতিবাচক বললেও নির্বাচনী পরিকল্পনায় অসন্তোষ জামায়াতসহ সমমনা ৮ দলের
শিবচরে ট্রাকে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের মামলায় রাজসাক্ষী হাজির ট্রাইব্যুনালে
শাপলা চত্বরে গণহত্যা তদন্তে দুই মাস সময় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল
নামসর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে ফের সক্রিয় ইসকন
শরিয়াহ আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত হামলা চলবে: টিটিপি
পরিবেশবান্ধব নির্বাচন নিশ্চিত করতে পোস্টার নিষিদ্ধ করল কমিশন
ভারত থেকে আমদানির খবর ছড়াতেই পেঁয়াজের দামে পতন
আসামে ৫৮০ মুসলিম পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে দিল রাজ্য সরকার
ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা-মাছি মারার হুকুম কী?
জামায় কবুতরের বিষ্ঠা থাকলে কি নামায সহীহ হবে?
চৌদ্দগ্রামে ট্রাক-সিএনজি-অটোর ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৫
নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজপথ কর্মসূচি প্রতিরোধে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবের
কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ আহ্বান

দেশের নিরাপত্তা ঠিক রাখতে সেনাবাহিনীদেরকে সব বিতর্কের উপরে থাকা প্রয়োজন

আমার কলম অনলাইন

পুরান ঢাকার প্রচলিত একটি শ্লোক আছে — “নখ নিয়া যেমন-তেমন, চোখ নিয়া ঢং না।” এই শ্লোকটা আমাদের মনে করায়: মানুষের ভরসার শেষ প্রতিষ্ঠানকে অবহেলা করা ঠিক নয়। কোনো দেশের ক্রান্তিকালে সবচেয়ে ভরসার ঠিকানা থাকে তার সেনাবাহিনী — বাংলাদেশে তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। তবুও সময়по সময় শুধু অবহেলা নয়, সেনাবাহিনীকে বিতর্কেরও বিষয় করা হচ্ছে। জাতিগত ঐক্য ও সংহতির প্রতীককে বিতর্কের মধ্যে রাখা হলে ভরসার সাহারা থেকে অনেক কিছু কেটে পড়ে। অনেকে হয় অনবোধে, হয় জেনেই-মনে সেনাকে হতাশ কিংবা বিব্রত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

কোনো ইস্যুতে সেনাবাহিনীকে চটকদার করে তুলতে সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত প্রচেষ্টা দেখা যায়। এ প্রচেষ্টায় সফল যারা হবে তাদের স্বার্থে দেশ নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হতে পারে — এবং সম্প্রতি এই ধরনের প্রচারণা তীব্রতর হয়েছে। সেনাবাহিনী সম্পর্কে অবান্তর কথা ছড়ানো, আজেবাজে ন্যারেটিভ গঠন — এসব কিছু এদের রুটিনে পরিণত হয়েছে। দাবী করা হয়েছিল চব্বিশের জুলাই-আগস্টের ‘বিপ্লব’ এ রোগ সারাতে পারত; কিন্তু মাঝেমধ্যেই আবার পুরনো গুজব মাথা ঝোঁকাচ্ছে। রাতে সেনানিবাসে ছোটখাটো কু-প্রচেষ্টা হয়েছে, সামনে বড় ঘটনা ঘটবে, সেনাপ্রধানকে ঘিরে রাখা হয়েছে, জাহাঙ্গীর গেট ও অন্যান্য জায়গায় ট্যাংক নেমে এসেছে — এ রকম বিভ্রান্তিকর কথা রটাতে বিবেক বন্ধ করাও হয়েছে গুজবকারীদের।

কিছু লোক সেনাবাহিনীকে ‘বিচারের লক্ষ্যবস্তু’ বানানোর চেষ্টা করছে — গুম সংক্রান্ত ঘটনার তদন্তকে সার্বিকভাবে পুরো সেনাবাহিনীর বিচারের প্রতীক বলা হচ্ছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার করা হয়েছে: গুমের অভিযোগগুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, প্রতিষ্ঠানগত নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা সদর থেকে বিষয়টি খোলাখুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গুম মামলা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি থাকা ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে আছে; একজন অবসরপ্রস্তুতির ছুটিতে। এই ১৬ জনের মধ্যে মাত্র একজন — সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ — আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁর ব্যাপারেও সেনাবাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তাঁকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘ইলিগ্যাল অ্যাবসেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে; খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

সেনাবাহিনী আদালত-ব্যবস্থাকে ছাড়িয়ে কিছু করছে না; বরং আইনকে স্বাভাবিক গতিতেই চলতে সহযোগিতা করছে। গঠিত জাতীয় কমিশনের তদন্তে সেনাবাহিনী শুরু থেকেই সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে — তথ্য সরবরাহ, নথি প্রদান ও সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিচার শুরু হওয়ার পর অভিযুক্তদের পরিবার থেকে পৃথক করে সেনা হেফাজতে এনে বাহিনী বিচারের প্রক্রিয়াকেও সহায়তা করেছে। এছাড়া গুমের শিকার পরিবারদের প্রতি সেনাবাহিনী গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। তথাপি মিডিয়া-ট্রায়াল ও পাবলিক ট্রায়ালের মাধ্যমে আগেই রায়দান করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে; এতে ব্যক্তিগত দায়কে পুরো বাহিনীর উপর অপুস্ত করা হচ্ছে।

অনেকে জানলে ও না জানলে চালিয়ে যাচ্ছেন এমন ন্যারেটিভ — উদাহরণস্বরূপ, ডিজিএফআই ও র‌্যাবকে বিলুপ্ত বা অকর্মণ্য ঘোষণার প্রস্তাবও উঠছে। আসলে তদন্ত-আদালত প্রক্রিয়ার সময়ে বেশির ভাগেই প্রতিষ্ঠানের নয়, কিছু নির্দিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওই সময়ে অভিযুক্তদের কেউই সরাসরি সেনাবাহিনীর কমান্ড-স্ট্রাকচারের অধীনে ছিলেন না; অনেকে ছিল ডেপুটেশনভিত্তিতে। ডিজিএফআই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কর্মরত একটি সংস্থা। এসব বাস্তবতা জানার পরও গোটা সেনাবাহিনীকে বারবার সরকারের বা জনগণের মুখোমুখি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিছু মহল।

এই বায়না-গ্রন্থনা থেমে গেলে বিপদকে টলানো যেত। কিন্তু ক্রমে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের কল্প-কথা একটার পরে একটা বুনে নিয়ে গেলে কোথায় গিয়ে থামবে বলা দায়— হয়তো কেউ বলতে বসবে বিচার বিভাগ অপ্রয়োজনীয়, বিচারকরা পালিয়েছে, তাই বিচার বিভাগই বিলুপ্ত করতে হবে; বা খতিব পালিয়েছে বলে বায়তুল মোকাররমও বিলুপ্ত করে দেওয়া হোক — ইত্যাদি। এর ধারাবাহিকতা বাড়লে শেষে কারো হাতেই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিলুপ্ত করার বায়না পৌঁছাতে পারে — যা বাস্তবে নেই এমন এক ভয়াবহ কল্পনাচিত্র তৈরির ফল হবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সিআইএ, এফবিআই, আইএসআই-র মতো সংস্থাপ্রতিষ্ঠান নিয়েও নানা কথা বলা হয়; তবে সেখানে প্রতিষ্ঠানের পুরো অস্তিত্ব-নাশের বায়না তুলার নজির দেখা যায় না।

সারাংশ: সেনাবাহিনী হলো দেশের একটি ভরসাযোগ্য প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া ও আইনের মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত; পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করে বেন্যথা সৃষ্টি করা দেশের স্বার্থে ক্ষতিকর। সে কারণেই ভবিষ্যতে নস্যাৎ-জাতীয় ন্যারেটিভ গঠনে সমাজকে দাবিয়ে রাখতে নানা পক্ষকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ