জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেছে। শুক্রবার বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি-জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সনদে স্বাক্ষর করেন।
সাত দফা অঙ্গীকারনামা
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে সাত দফা অঙ্গীকারনামা।
প্রথম ধারায় বলা হয়েছে— জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ঐকমত্যের প্রতিফলন হিসেবে প্রণীত এই নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে সব দল।
দ্বিতীয় ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে— জনগণের সুস্পষ্ট অভিপ্রায়ের প্রতিফলন হিসেবে গৃহীত এই সনদ সংবিধানে তফসিল আকারে বা উপযুক্তভাবে সংযোজন করা হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছে— এই সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
চতুর্থ ধারায় জোর দেওয়া হয়েছে— গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের ১৬ বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
পঞ্চম ধারায় উল্লেখ রয়েছে— গণঅভ্যুত্থান-পূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকারদের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, পরিবারগুলোর সহায়তা ও আহতদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।
ষষ্ঠ ধারায় বলা হয়েছে— রাষ্ট্রব্যবস্থা, সংবিধান, নির্বাচন, বিচার, প্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কাঠামো সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন, সংযোজন, নতুন আইন প্রণয়ন ও বিধিমালা পরিবর্তনের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
শেষ তথা সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে— জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা সম্ভব, সেগুলো কোনো বিলম্ব ছাড়াই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে।
এই সনদে স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্য ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।