হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫১৬টি তৈরি পোশাক কারখানার স্যাম্পল বা নমুনা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে সরাসরি ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার সমান। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রত্যক্ষ ক্ষতির বাইরে সামগ্রিক ক্ষতি এক হাজার কোটি টাকার কম নয়।
বিজিএমইএর সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণে পোশাক খাতের সরবরাহ চেইন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে রফতানি কার্যক্রম অন্তত এক মাস পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত ১৮ অক্টোবরের এ অগ্নিকাণ্ডের পরপরই বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। অনলাইনে তথ্য জমা দেওয়ার জন্য বিশেষ লিংক দেওয়া হয় এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য পাঠানোর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। সোমবার পর্যন্ত মোট ৫১৬টি কারখানা তাদের ক্ষতির হিসাব জমা দেয়, যেখানে মোট ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারিত হয় প্রায় ৮০ লাখ ডলার বা ৯৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বর্তমানে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সংশোধনের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করছে। এসব সংগঠন সরকারের অনুমোদন নিয়ে রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির অনাপত্তিপত্র প্রদান করে। শুধু পোশাক নয়, ওষুধ শিল্প ও কৃষিপণ্য রফতানিকারকরাও কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে থাকেন। আগুনে এসব খাতের পণ্যও পুড়ে গেছে, যদিও ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো নির্ধারণ হয়নি।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ায় লিড টাইম অন্তত এক মাস পিছিয়ে যাবে। ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন স্যাম্পল সংগ্রহ, অনুমোদন ও উৎপাদন সম্পন্ন করতে এই অতিরিক্ত সময় লাগবে।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, “আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি, প্রকৃত ক্ষতি তার চেয়েও বেশি হতে পারে। অনেক কারখানা এখনো তাদের ক্ষতির হিসাব দেয়নি।” তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠান অনন্ত অ্যাপারেলেরই প্রায় ৪০ হাজার ডলারের ক্ষতি হয়েছে। আগুনে পোশাকের স্যাম্পলের পাশাপাশি সুতা, কাপড়ের মান যাচাইয়ের স্যাম্পল ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কুরিয়ারে পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ নথিও নষ্ট হয়েছে। তবে রফতানির জন্য প্রস্তুত পণ্য আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি; ওই দিনই তাঁর কারখানার ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনায় আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন। রফতানিকারকরা ধারণা করছেন, এটি পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা হতে পারে, কারণ এত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এমন অগ্নিকাণ্ডের যৌক্তিক কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুটি পোশাক কারখানায়ও আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।





