গাজীপুরের টঙ্গী টিএন্ডটি কলোনির বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানীর কথিত ‘অপহরণ’ ঘটনাটি পরিকল্পিত নাটক বলে দাবি করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি নিজেই পুরো ঘটনাটিকে সাজানোর কথা স্বীকার করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুফতি মুহিবুল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে ‘অপহরণ নাটক’ সাজিয়ে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। মামলার অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোনের অবস্থান ও চিকিৎসা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ঘটনাটির সঙ্গে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
পুলিশ জানায়, ২২ অক্টোবর সকালে প্রাতঃভ্রমণের সময় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পঞ্চগড়ের হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকলবন্দি করে ফেলে গেছে— এমন দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ তদন্ত, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং সর্বশেষ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ‘অপহরণ’ নয় বরং এটি ছিল একটি সাজানো ঘটনা।
মুহিবুল্লাহ মাদানী স্বীকারোক্তিতে জানান, তাকে কেউ জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলেনি; বরং তিনি নিজেই হেঁটে শিলমুন এস্কেস সিএনজি পাম্পে যান। সেখান থেকে অটোরিকশায় পূবাইলের মীরেরবাজার, পরে জয়দেবপুর, সেখান থেকে ঢাকার শ্যামলী ও গাবতলী হয়ে নিজেই পঞ্চগড়ের উদ্দেশে বাসে রওনা দেন। পঞ্চগড়ে পৌঁছে হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় নিজেই নিজের পায়ে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে নেওয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে তার স্বজনদের হেফাজতে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে পুলিশি স্বীকারোক্তি প্রকাশের পর স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। টিএন্ডটি কলোনির বাসিন্দা লিয়াকত আলী বলেন, “যদি সত্যিই অপহরণের ঘটনা না ঘটে থাকে, তবে এমন নাটক সাজিয়ে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়ানো মারাত্মক অপরাধ।”
ঘটনাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক এসএম মেহেদী হাসান জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মুফতি মুহিবুল্লাহকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২২ অক্টোবর সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে নিখোঁজ হন মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী। পরদিন সকালে পঞ্চগড়ের হেলিপ্যাড বাজারে শিকলবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাটি দেশজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয় এবং তৌহিদী জনতা ‘ইসকন’ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।





