মরুপ্রান্ত থেকে অনেক দাই (দুধমা) শিশু লালন-পালনের জন্য মক্কায় আসতেন। তাঁদের মধ্য থেকে হালিমা বিনতে আবু যায়দ সাদিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নামে এক নারী, তাঁর স্বামী হারিস ইবনু আবদুল উযযাসহ এসেছিলেন।সেদিন অন্য সব দাই ধন-সম্পদশালী পরিবারগুলোর শিশু বেছে নেয়, কারণ এতিম শিশু থেকে সাধারণত কোনো উপহার পাওয়া যেত না।
কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় হালিমা তাঁর স্বামীকে বলেন—“চলেন এই এতিম শিশুটিকেই (রাসুল সাঃকে) নিয়ে যাই। হয়তো এতে বরকত থাকবে।”এভাবেই নবী করিম ﷺ গেলেন বনু সা‘দ গোত্রে।
বরকতের শুরু
হালিমা নবীজী ﷺ-কে কোলে নেওয়ার মুহূর্ত থেকেই তাঁর জীবনে পরিবর্তন শুরু হয়।তাঁর উটনীর শুকনো স্তনে দুধ ফিরে আসে।তাঁর গাধা, যা চলতে পারছিল না, হঠাৎ দ্রুতগামী হয়ে ওঠে। তাদের মরুপ্রান্তে পৌঁছেই দেখা গেল, তাঁদের পশুগুলো প্রচুর দুধ দিতে শুরু করেছে। হালিমাতুস সা’দিয়া নিজেই বলেন —“যেখানেই মুহাম্মাদ ছিল, সেখানেই বরকত নেমে আসত।”
শৈশবের জীবন ও শিক্ষা
নবী ﷺ বনু সা‘দ গোত্রে প্রায় চার বছর অবস্থান করেন।এই সময় তিনি।মরুপ্রান্তের বিশুদ্ধ ও সাবলীল আরবি ভাষা আয়ত্ত করেন।প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়ে শারীরিকভাবে দৃঢ় ও সহনশীল হন এবং অত্যন্ত ভদ্র, শান্ত ও চিন্তাশীল স্বভাব প্রকাশ করতে থাকেন।
বক্ষ বিদারণের ঘটনা (شقّ الصدر)
নবীজী ﷺ যখন প্রায় চার বছরের, তখন একদিন তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে খেলছিলেন। হঠাৎ দুজন সাদা পোশাক পরা ফেরেশতা এসে তাঁকে শুইয়ে তাঁর বুক বিদীর্ণ করেন।পবিত্র হৃদয় বের করে একটি কালো অংশ বের করেন। তা জমজমের পানি দিয়ে পরিশুদ্ধ করেন। তারপর আবার যথাস্থানে স্থাপন করেন। ফেরেশতারা বলেন-“এটাই হলো সেই অংশ, যেখানে শয়তান প্রভাব ফেলতে পারে। সহপাঠীরা দেখে ভয়ে দৌড়ে গিয়ে বিষয়টি মা হালিমাকে জানায়। হালিমা সা’দিয়া ভয়ে তাঁকে দ্রুত মক্কায় তাঁর মা আমিনা (রাঃ)-এর কাছে ফিরিয়ে দেন।
মায়ের সান্নিধ্যে ফেরা
হালিমা সা’দিয়া নবীজী ﷺ-কে ফিরিয়ে দিলে মা আমিনা অত্যন্ত স্নেহভরে তাঁকে কোলে তুলে নেন।এরপর নবী ﷺ মায়ের কাছে থাকতে থাকেন যতক্ষণ না মা আমিনা তাঁকে নিয়ে তাঁর পিতা আবদুল্লাহর কবর জিয়ারতের জন্য ইয়াসরিব (মদিনা) যান।
পড়ুন আগের পর্ব-১