ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে দিল্লিতে ‘নিরিবিলি ও স্বাধীনভাবে’ জীবনযাপন করছেন। মাঝে মাঝে শহরের লোধি গার্ডেনে হাঁটতেও যান বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে অতীতে পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের কারণে এখনও তিনি সতর্ক আছেন।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, ভারতের বাইরে আশ্রয় নেওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। বুধবার (২৯ অক্টোবর) তার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিহত প্রতিটি শিশু, ভাইবোন, আত্মীয় ও বন্ধুর জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি।’ তবে এজন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে রাজি নন তিনি। তার দাবি, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা সরকার পতনের জন্য অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রের পথ নিয়েছিল।
আরো পড়ুন
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন না করে লাখো নাগরিককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। হাসিনার ভাষায়, “এটি জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগসহ সব প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। “কার্যকর গণতন্ত্র চাইলে লাখ লাখ ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না,” মন্তব্য করেন তিনি।
তবে সমালোচকরা মনে করিয়ে দেন, তার শাসনামলেই বিরোধী দলগুলোকে ছাড়াই একাধিক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে বিপুলসংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারেননি।
হাসিনা জানান, তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। দেশের ভবিষ্যতের জন্য সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মত দেন তিনি। “একজন ব্যক্তি বা একটি পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না,” বলেন হাসিনা। বর্তমানে তার অগ্রাধিকার বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত কিছু অডিও বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে। তার দাবি, “আমি কখনও বাহিনীকে আন্দোলন দমাতে গুলি চালানোর নির্দেশ দিইনি। ”তবে তিনি স্বীকার করেন, “চেইন অব কমান্ডের ভেতরে কিছু ভুল অবশ্যই হয়েছিল।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ নাকচ করে হাসিনা বলেন, এসব মামলা প্রমাণ ছাড়াই করা হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনালটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গঠিত।
রয়টার্সকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমার মামলাগুলো ক্যাঙ্গারু কোর্টে চলছে, যেখানে অপরাধী বানানোর রায় আগেই নির্ধারিত।” মৃত্যুদণ্ড হলেও তিনি “অবাক বা ভীত হবেন না” বলেও মন্তব্য করেন হাসিনা।তার মতে, “আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায় নয়, আত্মঘাতীও।”
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার সরকার ২০২৪ সালে পতনের কয়েকদিন আগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে, ফলে দলের সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
হাসিনা সতর্ক করে বলেন, “এই অবস্থায় কোনো নির্বাচন হলে তা ভবিষ্যতে আরও বিভাজন সৃষ্টি করবে।” তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা পেতেই হবে। লাখ লাখ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে, বর্তমান অবস্থায় তারা ভোট দেবে না।”
তবে তিনি সমর্থকদের অন্য কোনো দলকে ভোট দিতে বলেননি। তার আশা, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করতে পারবে।





