বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামিসহ ২৪ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তবে এতে অংশ নেয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
দলগুলোর স্বাক্ষরের পর এতে সই করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্য। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেসব রাজনৈতিক দল এখনো সই করেনি, তারা চাইলে পরবর্তী সময়েও এতে যুক্ত হতে পারবে।
এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যেমন আপত্তি জানিয়েছিল এনসিপি, সনদ নিয়েও তারা একই অবস্থানে রয়েছে। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট না হওয়ায় তারা সই থেকে বিরত থেকেছেন।
তিনি বলেন, “জুলাই সনদের বিভিন্ন দিক নিয়ে সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস চাইলেও বাস্তবায়নের রূপরেখা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এতে আমাদের অর্জন বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই আমরা স্বাক্ষর করিনি।”
আখতার হোসেন আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের পথনকশা, বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান, আদেশের খসড়া পরিষ্কার করা এবং ভবিষ্যৎ সংবিধান সংস্কারে ২০২৬ সালকে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখের বিষয়গুলোতে সমাধান চায় এনসিপি।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা পরিবর্তনের যে অঙ্গীকার করেছি, সেটিকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই। ড্রাফট আদেশ, গণভোট ও নোট অব ডিসেন্ট—এসব বিষয়ে স্পষ্টতা না এলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সনদে স্বাক্ষরের আগে তিনটি দাবি জানান। সেগুলো হলো—
- জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া প্রকাশ করা,
- খসড়াটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে জারি করা,
- জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সনদের বৈধতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা।
দলটি আরও জানিয়েছে, সনদের ৮৪টি সংস্কার বিষয়ে গণভোট আয়োজন করতে হবে। গণভোটে জনগণ যদি সনদের পক্ষে রায় দেয়, তবে নোট অব ডিসেন্টের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। জনগণের রায়ের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচিত সংসদ সংবিধান সংস্কার করবে, যার নাম হবে ‘বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬’। এনসিপি মনে করে, এসব নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে সই করা মানে হবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা।





